Script:

নদীমাতৃক বাংলায় বন্যা একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা। দক্ষিণবঙ্গের নদী গুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায়,  বৃষ্টিই বন্যার একটি অন্যতম কারণ। কেলেঘাই নদীর বন্যা পরিস্থিতি তার ব্যতিক্রম নয়। বর্ষাকালে বাঁশের ও কাঠের নির্মিত সাঁকোর সলিল সমাধি কেলেঘাই নদীর অববাহিকায় একটি পরিচিত ঘটনা (চিত্র-১)। এই নদী অববাহিকায় যোগাযোগের বেহাল অবস্থা এবং দুঃসহ জীবন সংগ্রামের ইতিহাস বারেবারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে।  কেলেঘাই নদী মানেই ভয়াবহ বন্যা এবং বন্যাদূর্গতদের হাহাকার। এই নদীর বন্যা প্রধানত কেলেঘাই, কপালেশ্বরী ও বাগুই নদীর সম্মিলিত জলপ্রবাহের দ্বারাই সংগঠিত হতো। এখানে হতো বলার কারন হিসেবে বলতেই পারি যে ২০০৮ সালের পর কেলেঘাই, কপালেশ্বরী ও বাগুই অববাহিকাতে  তেমন ভাবে কোন অতিপ্লাবনের ঘটনা নজরে আসেনি বা বন্যা দুর্গতদের হাহাকার নিয়ে বিশদ চর্চা ও ছবি দেখা যায়নি। অববাহিকার বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকায় সাময়িক জলমগ্নতা ঘটলেও তা খুবই অল্প সময়ের। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় Flood Management Programme এর অধীনে ২০১০ সালের শেষ অর্ধ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে ব্যাপক পরিমানে কেলেঘাই নদী ও তার অববাহিকা তথা আশপাশের এলাকার সংস্কার সাধন (কেলেঘাই-কপালেশ্বরী–বাগুইপ্রকল্প-২০১০) হয়েছে তা কেলেঘাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রনে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

চিত্র-১: বর্ষা কবলিত কেলেঘাই নদীতে খেয়া পারাপার। (A) তালাডিহার খেয়া, (B) বেহুলার খেয়া,  (C) আমগাছিয়ার খেয়া।

কেলেঘাই অববাহিকার প্রায় ২১৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা কমবেশি সমস্ত খাল তথা প্রধান নদীখাতের গভীরীকরন, সরলীকরণ, প্রশস্তকরণ (প্রধান নদী ও তার অববাহিকার বিভিন্ন খালগুলির দৈর্ঘ্য মিলে মোট ১৪০ কিলোমিটার নদীখাত) এবং বিভিন্ন নদীবাঁধের (প্রায় ১৪০ কিলোমিটার রাস্তা এবং ছোটবড় ১৪ টি ব্রীজ) উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে এই এলাকাবাসীর দুঃখের সাময়িক প্রশমনের চেষ্টা  হয়েছে । কিন্তু এই সংস্কারকে কোনোভাবেই স্থিতিশীল ও  সূদুরপ্রসারী কিংবা কার্যকরী প্রকল্প বলা চলেনা। অদূর ভবিষ্যতে এই অব্বাহিকা পুনরায় বন্যা কবলিত হবে, যার ভয়াবহতা বিগত দুর্যোগের থেকে বেশ কয়েকগুণ বেশি হবে বলে গবেষকগণের ধারনা।  যা সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরও স্বীকার করেছেন তাদের  Annual Report 2010 – 2011 তে একপ্রকার  উল্লেখ করেছেন যে “Around seventeen lakh people living in 621sq.km of an area will be relived of the perpetual drainage congestion to a great extent for a considerable period – pp – 36, Annual Report 2010 – 2011, Dept. of Irrigation and Waterways, Govt. of West Bengal”. এখানে সরকারী দপ্তর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছেন যে এই নদীসংস্কারের সুফল এখানকার জনসাধারণ অনেকটা সময় ধরে উপভোগ করবেন । কিন্তু তা অনন্তকালের জন্য  কোনোভাবেই কার্যকর নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেলেঘাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রনের সুস্হায়ী বন্দোবস্ত তাহলে কি হতে পারে? এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমেই কেলেঘাই নদী ও তার অববাহিকার গঠন ও উৎপত্তি সম্বন্ধে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে রাখা দরকার।  

এই নদীর গতিপথ সময়ের সাথে সাথে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।  নদী বিশেষজ্ঞ K. Rudra,  (2002) একটি নিবন্ধে বলেছেন বঙ্গ জুড়ে নদীর গতিপথের পরিবর্তন তৎকালীন আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে উদ্বুদ্ধ করলেও তা  ছিল সাময়িক । সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব যে ছিল তা আজ  প্রযুক্তির সাহায্যে প্রমানিত। সেই  পর্যবেক্ষণ হেতু কেলেঘাইর আদি গতিপথ সম্পর্কে আলোকপাত ভীষণ জরুরী। কেলেঘাই নদী ঝাড়গ্রাম জেলার  সরডিহার নিকটবর্তী দুধকুন্ডী মৌজায় ভূগর্ভস্থ জলাধার  চিরন্তনী অবিরাম ঊর্ধ্বমুখী মিষ্টি জলের উৎস  থেকে উৎপন্ন। তারপর ক্রমাগত দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহ  পথে খড়্গপুর, নারায়ণগড় ব্লক ছুঁয়ে  সবং ও পটাশপুর ব্লকের সংযোগসীমা বরাবর  অব্বাহিকাকে প্রশস্থ করেছে। পটাশপুরের চিস্তিপুর অঞ্চলের কাছে  আমগাছিয়া ও মংলামাড়োর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইটাবেড়িয়া, কালিনগর হয়ে রসুলপুর মোহনায় এসে পতিত হতো। কেলেঘাই নদীর এই আদি দক্ষিণমুখী অববাহিকাটি ১৭৭৭ সালের Rennel’s Atlas এর সাথে সাথে ১৯৩৩ সালে সার্ভেয়র জেনারেল অফিসিয়েটিং কর্নেল H.J. Coachman D.C.O. Sc. এর মানচিত্রে ও  প্রকাশিত  আছে (চিত্র-২)। বর্তমানে, কেলেঘাই নদীর ঐ পরিত্যক্ত গতিপথ আদি কেলেঘাই নদী রূপে ঐ অঞ্চলে আজও বিদ্যমান। যদিও তার অনেকাংশই রাস্তা, ব্রীজ, ঘরবাড়ি ও চাষের জমির মধ্যে বিলীন প্রায়। অন্যদিকে  নদীর বর্তমান ক্রমোচ্চ পূর্বমুখী শাখা ও কপালেশ্বরী নদীর মিলিত ধারাই কেলেঘাই নদীর রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং  কেলেঘাই নদী তার প্রায় ১৫ কিমি আদি গতিপথ থেকে আমগাছিয়া নামক স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  তদানীন্তনকালে মনুষ্যদ্বারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে কেলেঘাই ছিন্নমস্তা নদীর রূপধারণ করে  ক্রমোচ্চ পূর্বমুখে  প্রবাহিত হয়ে কপালেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নূতন গতিপথ তৈরি করে নদীর এই প্রবাহ ছিল একেবারেই প্রকৃত ঢালের বিপরীতমুখী। প্রকৃত ঢাল ছিল আদি কেলেঘাইর। সুতরাং কেলেঘাই নদীর আদি গতিপথে আমগাছিয়া নামক স্থানে সুউচ্চ বাঁধ নির্মাণ ও পরিবেষ্টন তার আদি গতিপথকে বিচ্ছিন্ন করে।  অন্যদিকে ক্রমোচ্চ  পূর্বমুখী ঢালে কেলেঘাই নদীর গতিপথকে সূচিতকরন-এই দুই প্রকৃতি বিমুখ পরিবর্তনের মধ্যেই কেলেঘাই অববাহিকার ভয়াবহ বন্যার কারন লুকিয়ে আছে। 

চিত্র২: ১৭৭৭ সালে প্রকাশিত Reneel এর মানচিত্র অনুযায়ী নীল অংশ বর্তমানের কেলেঘাই নদীখাত ও লাল অংশ আদি কেলেঘাই নদীরখাত নির্দেশ করছে এবং গোলাপি বৃত্তাকার অংশ নতুন নদীখাতের অর্ধ পরিধিযুক্ত গতিপথ ও বন্যাকবলিত অংশ নির্দেশ করছে।  

কেলেঘাই নদীর সমগ্র অববাহিকা অঞ্চলটি প্রধানত তিনটি ভূগাঠনিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত। কেলেঘাই নদীর উৎস অঞ্চল থেকে বাগুই নদীর সংযুক্তি অঞ্চল পর্য্যন্ত এই নদী  স্বাভাবিক ভূমির ঢাল দ্বারা ভীষণভাবে পরিচালিত। পরবর্তী পর্যায়ে চণ্ডিয়া নদীর মোহনা পর্যন্ত কেলেঘাই নদীর মধ্য প্রবাহ । এই অংশের অববাহিকা অনেকটা সরার  মতো। কেলেঘাইর এই অংশে বন্যার বারংবারতা ও বীভৎসতা অনেক বেশি। একেবারেই শেষ পর্যায়ে কেলেঘাই নদীর অববাহিকা, অত্যধিক মাত্রায় জোয়ারের জলের প্রতিনিয়ত প্রবেশ ও নির্গমন পদ্ধতি দ্বারা প্রভাবান্নিত। কেলেঘাই নদী তার উৎস থেকে মোহনা পর্য্যন্ত  অনেকগুলি ছোট ছোট উপ অববাহিকার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে (চিত্র-৩)। এই উপ-অববাহিকাগুলি হল-

১)    কেলেঘাই নদীর উচ্চ প্রবাহ অংশের উপ-অববাহিকা

২)    কেলেঘাই নদীর নিম্ন প্রবাহ অংশের উপ-অববাহিকা

৩)    বাগুই উপ-অববাহিকা

৪)    দেউলী উপ-অববাহিকা

৫)    শালমারা-দাসপুর উপ-অববাহিকা

৬)    কপালেশ্বরী উপ-অববাহিকা

৭)    আমড়াখালি উপ-অববাহিকা

৮)    কাঁটাখালি উপ-অববাহিকা

৯)    পাঁচখুপি পাটচাঁদা-চণ্ডিয়া উপ-অববাহিকা

১০)   ময়না উপ-অববাহিকা

১১)   দেঁড়েদিঘী উদবাদল উপ-অববাহিকা

কেলেঘাই নদীর অববাহিকাতে সাধারণত পাঁচ প্রকার বন্যার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নদীর একেবারে উর্ধ্ব প্রবাহে হড়পা বানের উপস্থিতি। নদীর গতিপথের ঠিক পরের অংশে অতিবর্ষনজনিত জলের দ্বারা সৃষ্ট বন্যার প্রকোপ। নদীর একেবারে মাঝামাঝি অংশে যেখানে কেলেঘাই নদী ছিন্নমস্তা নদীর রূপ ধারণ করেছে সেই অংশে মোটামুটি নদীর জলোচ্ছ্বাসজনিত বন্যার প্রাধান্য বেশি। নদীর মোটামুটি নিম্নঅংশে যতদূর পর্যন্ত জোয়ার ভাটার প্রকোপ দেখা যায় সেই অংশে জোয়ার জনিত কারণে বন্যার আধিক্য লক্ষনীয় এবং নদীর একেবারে নিম্ন অংশে  অর্থাৎ নদীর মোহনার কাছে উপকূলীয় বন্যার উপস্থিতি বিশেষকরে নজরে আসে। এই পাঁচপ্রকার বন্যার মধ্যে অতিবর্ষন ও নদীর জলোচ্ছ্বাসজনিত বন্যার প্রাধান্যই কেলেঘাই নদীতে বেশি করে নজরে এসেছে (চিত্র-৪)।

চিত্র: কেলেঘাই নদীর বিভিন্ন উপ-অববাহিকা অঞ্চল

চিত্র: কেলেঘাই নদীর বিভিন্ন প্রকার বন্যা কবলিত অঞ্চল

বর্ষাকালে সবং ও পটাশপুর এই দুই থানাতে কেলেঘাই নদীর জলমগ্নতাজনিত বন্যার ভয়াবহতা ছিল ভীষণ।  ভবিষ্যতে বন্যার দুর্বিষহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে এই দুই  বহুল জনপদযুক্ত অঞ্চলকে। যার বেশ কয়েকটি  ভূগাঠনিক ও মনুষ্যজনিত কারণ বিদ্যমান। দক্ষিণমুখী আদি কেলেঘাই নদীর প্রশস্থ বকচরের দুই পাশে উঁচু মজবুত   নদীবাঁধ নির্মাণ যার একটি অন্যতম কারণ। অন্যান্য কারণ গুলির মধ্যে, আমগাছিয়ায় Cluster Lock Gate স্থাপন ও তার নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় দক্ষিণমুখী আদি কেলেঘাই নদীর অববাহিকাতে জলপ্রবাহিত করার অব্যবস্থা।   মংলামাড়োতে আদি কেলেঘাই নদীপথের ওপর বড় ব্রিজ তৈরির কাজকে অতি ব্যয়বহুল বিবেচনা করে পরিত্যাগ করা ইত্যাদি। সুতরাং কেলেঘাই নদীর আদি দক্ষিণমুখী মোহনার পথ বন্ধ হওয়ায়,  নদীর অববাহিকায় এই অংশে (আমগাছিয়া সংলগ্ন ও তার পশ্চিম অংশ) অতি বৃষ্টির জলকে  বাধ্য হয়ে ক্রমোচ্চ পূর্বে, উত্তর-পূর্বে  এবং পরে দক্ষিন-পশ্চিমে অর্ধবৃত্তাকার পরিধি পথে প্রবাহিত হতে হয়। ঐ প্রবাহিত বৃষ্টির জল যথাক্রমে কপালেশ্বরী, চন্ডিয়া, কংসাবতী, হলদি হয়ে হুগলী নদীর বিশাল জলরাশির প্রাচীরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হতে হয়। কেলেঘাইর এই প্রবাহিত ধারা, নদীর আদি দক্ষিণমুখী মোহনা পথের তুলনায় প্রায় কুড়িগুন সময় ধরে ধীরে ধীরে  প্রবাহিত হয়। এই কারণে  খড়্গপুর, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, বেলদা, দাঁতন, সবং, পটাশপুর, ডেবরা, পিংলা ও ময়না থানার অতিবর্ষনের জল নদীর মধ্য অংশে অনেক সময় ধরে আটকে পড়ে। বৃষ্টির মাত্রা বেশি হলে নদীর মধ্য অংশের অর্ধবৃত্তাকার অববাহিকার জলধারন ক্ষমতা  বিনষ্ট হয়। যার ফলে কখনো কখনো নদী বাঁধ উপচে  বা ভেঙে অতি বর্ষণজনিত জমা জল লোকালয়ে  প্রবেশ করে ও বন্যা সৃষ্টি করে।      

অবশেষে বলা যায় যে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কেলেঘাই নদীতে অতি বৃষ্টির জল দক্ষিণমুখী পথে অতিদ্রুত  বঙ্গোপসাগরে বিলীন হতো, সারা বছর বড় নৌকো চলত, বর্ষার মরসুমে জল ভরা কেলেঘাই নদীর সঙ্গে আটটি ব্লকের জল যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ফসল, গৃহ, সম্পত্তি ধ্বংসকারী বন্যা হতোনা বরং গভীর জলায় প্রচুর আমন ধান ফলত। জনসাধারণকে সুখী করার কেলেঘাইর বন্যার কলঙ্ক মুছে ফেলতে নদীমাতৃকার পুনুরুজ্জীবন প্রয়োজন। যার জন্য বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা যা সূচীত করবে কেলেঘাই নদীর আদিরূপ ফিরিয়ে আনার। অতি  বর্ষনজনিত বন্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা বিলোপ করতে বর্তমান ব্যাপক নদী সংস্কারের সাথে সাথে আমগাছিয়া থেকে মংলামাড়ো হয়ে  রসুলপুর মোহনা পর্যন্ত কেলেঘাই নদীর আদি গতিপথ সংস্কার খুবই প্রয়োজন। নদীর আদি গতিপথে সুউচ্চ ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ এবং একাধিক Lock Gate স্থাপনের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। প্রথমে আমগাছিয়া স্লুইসগেট থেকে মংলামাড়ো খাল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার আদি নদীপথ পুনুরুজ্জীবিতকরন অথবা বলভদ্রপুর থেকে মংলামাড়ো বাজার পার্শ্বস্থ আদি নদীখাত পর্যন্ত চার কিলোমিটার নতুন নদীপথ খনন করতে হবে। ঐ খননকৃত মাটির দ্বারা উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে লকগেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইটাবেড়িয়া খালে জল ছাড়তে হবে। যার ফলস্বরূপ কেলেঘাই নদীর অতি বৃষ্টির জল সহজেই ইটাবেড়িয়া নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বিলীন হতে পারে। তাহলেই বর্তমান কেলেঘাই অববাহিকার জলতল বিপজ্জনক উচ্চতায় উঠতে পারবে না। নতুন নদীপথ খননের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ বাবদ যত অর্থ খরচ হবে তা নতুন নদীবাঁধের ওপর জনবসতি স্থাপন, বৃক্ষরোপন, নদীতে মৎস্য চাষ ও নদীর বকচরে বোরো ধান চাষ প্রকল্প বাবদ অধিকাংশ অর্থ পুনরুদ্ধার হবে। বর্তমানেও  মংলামাড়ো  বাজার থেকে রসুলপুর মোহনা পর্যন্ত কেলেঘাই নদীর আদি গতিপথে সারাবছর নৌকো যাতায়াতের পরিবেশ পরিকাঠামো অব্যাহত রয়েছে। সেই অর্থে  প্রথমত, কেলেঘাই নদীর আদি গতিপথ সংস্কার, দ্বিতীয়ত, সেই সঙ্গে উভয় প্বার্শের বাঁধ উঁচু-চওড়া ও মজবুতীকরণ তৃতীয়ত, লকগেট স্থাপনের মধ্য দিয়ে কেলেঘাই অববাহিকার চল্লিশ শতাংশ জল যদি আদি গতিপথ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বিলীন করা যায় তবে স্থানীয় জনসাধারণের কোনরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। বরং নদী তীরবর্তী এলাকা এই প্রকল্পের সহায়তায় বেশী করে উপকৃত হবেন। ২০১০ সালের শেষ অর্ধে যে ব্যাপক পরিমানে কেলেঘাই নদী ও তার অববাহিকা তথা আশপাশের অববাহিকার সংস্কার সাধন করা হয়েছে তার ফলস্বরূপ বিগত কয়েক বছর (২০১০-২০২০) কেলেঘাই অববাহিকাতে তেমন ভয়াবহ বন্যার প্রকোপ দেখা দেয় নি। তবুও জোয়ারের কারণে প্রধান নদীখাত তথা ছোটবড় সমস্ত খালগুলোতে প্রচুর পরিমানে পলি সঞ্চয় ঘটেছে। নদীখাতের অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত (প্রধানত অবৈধ ইঁটভাটা, মৎস্য ভেড়ী ও নদীর আড়াআড়ি ভাবে মাছ ধরার জালের আধিক্য) অধিগ্রহণের ফলে কেলেঘাই নদীর সেই পুরনো বন্যার স্মৃতি ফিরে আসার সময় আসন্ন প্রায় যা নিরুপম আচার্য ও তার সহযোগী গবেষকদের গবেষণায় উঠে এসেছে  (২০১০)। সুতরাং মাঝের এই কয়েকটা বছর (২০১০-২০২০) বাদ দিলে বারংবার ৩০ বছর যাবৎ কেলেঘাই নদীর প্রবল বন্যা প্রমান করেছে বর্তমান কেলেঘাই নদীর সংস্কার এর সাথে সাথে কেলেঘাই নদীর আদি গতিপথ  পুনুরুজ্জীবন কতখানি জরুরি। বিশেষত পরিবর্তনশীল জলবায়ুর খামখেয়ালিপনায় অতি ভারী বর্ষণ জনিত ঘটনার কথা স্মরণ করে, উল্লিখিত প্রস্তাবনা গুলি রূপায়ন করলে কেলেঘাই নদীর বন্যার ভয়াবহতা চিরস্থায়ীভাবে অবলুপ্ত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে নদী অববাহিকার জনজাতির জীবন জীবিকার  ভবিষ্যৎ সুরক্ষা অনেকটাই স্থিতিশীল হবে বলে আশা করাযায়।

(A)-কেলেঘাই নদী অববাহিকার উপগ্রহ চিত্র। (B)- নদীর তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটা, কাঁটাখালী-সবং।  (C)-২০০৮ সালের বন্যা পরবর্তী রিলিফ ক্যাম্প, মারকুন্ডচক-সবং। (D-E-F)- ২০০৮ সালের বন্যা কবলিত গ্রামের চিত্র, আমগাছিয়া-পটাশপুর। 

তথ্যসূত্র-

  • Acharyya, N., Maiti, S., & Bandyopadhyay, J. (2010). Modelling Flood of Pataspur-I Block, In Purba Medinipur, West Bengal Using Geoinformatics. Indian National Cartographic Association
  • Annual Report (2010 – 2011). Dept. of Irrigation and Waterways, Govt. of West Bengal
  • Rudra, K.(2002):  Floods  in  west  Bengal, 2000/causes &  consequences in changing Environmental scenario of the Indian subcontinent. Ed. by Subhasranjan Basu. ACB publication,Kolkata.pp.326-347.

Published By:

Normal Issue-I, September-2021

www.keleghai.in

Email: o.keleghai@gmail.com                                                           

Share the article

4 Comments

  1. দিলীপ কুমার ভুঁইয়া

    পশ্চিম বাংলার রাজনীতি একটা অতিরিক্ত লভ্যাংশ ব্যবসা,,,,,, এখানে বন্যা হওয়াটা স্বাভাবিক,,,,, লজ্জা লাগে এখানে নেতা মন্ত্রী দের কার্য্য কলাপ দেখলে,,,,, ইচ্ছে করে আত্মহত্যা করি এই সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে,,,, ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ

    Reply
    • Amalendu Mahato

      বঙ্গ রাজনীতি আজ ব্যাক্তি স্বার্থকেন্দ্রীক। জনগণের মূল্যবান মতদানে নির্বাচিত প্রতিনিধি গত নির্বাচিত হওয়ার পর, অতি সহজেই নিজের স্বার্থে সমগ্র জনগণের আত্ম সেবার উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাণ বলে, জনগণের বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজস্ব স্বার্থে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এর কলেবর সমৃদ্ধ করতে দলবদল করে চলেছে।একবারের জন্যও ঐ জনগণের ,তাদের কিমতি(মূল্যবান ভোটে প্রতিনিধিত্ব) ভোটে ঐ সুযোগ পেয়েছে, তাদের মতামত নূওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনা।

      আর ঐ প্রতিনিধিদের একাংশের মদতপুষ্ট কিছু সমাজবিরোধীর অসামাজিক কার্যকলাপে সাধারন মানুষ তিতিবিরক্ত হলেও প্রতিবাদ করতে পারেনা। আর ঐ সুযোগেই তারা ফুলে-ফেঁপে উঠছে।
      কেলেঘাই নদীর বন্যার প্রধান কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যে কথা বলা যায় তার হল ঐ নদী চলে গজিয়ে ওঠা ইঁট ভাটা_ মাছ চাষের ভেড়ি, তথা আদি কেলেঘাই এর গতিপথ পরিবর্তিত করে নদীকে অন্য পথে চালিত করা।

      Reply
  2. Suren bhunia

    লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ। আপনার কথামত যদি কেলেঘাই এর আদি গতিপথ ফিরিয়ে আনা যায় তবে লাখো মানুষ উপকৃত হবে।
    ধন্যবাদ।

    Reply
  3. BARUN ROY

    কিছু বছর আগে কেলেঘাই সংস্কার হয়েছিল, শুধু লোক দেখানো মাত্র, বড় বড় কন্টাকটার আর নেতাদের আখের লাভ হয়েছে, ঠিকঠাক সংস্কারও হয়নি, এটা আমাদের পশ্চিমবঙ্গ মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট নেয়ার নাম করে ,সামনে সামান্য কিছু কাজ করে, জনগণের কাছে, আবার ভোট নেয়ার, পরিকল্পনা করে, আবার বন্যা আসে ত্রাণ আছে, নেতাদের পেট ভরে,এ চলতে থাকবে,

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.