কেলেঘাই নদীর লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় মাছ
ড. মৃন্ময় মণ্ডল, ড. নীলাঞ্জনা দাস চ্যাটার্জী
দক্ষিণবঙ্গের এক বৈচিত্র্যময় নদী কেলেঘাই। এই নদী তার পার্শ্ববর্তী ভূমিরূপ গঠনে যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে তেমনই বৈচিত্রের নিরিখে জনজাতিকে সমৃদ্ধ করেছে তার নিজস্ব উপাদান দিয়ে (নিলয় বর্মণ, ২০২১)। এই নদীর নিজস্ব জীববৈচিত্র্য দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য নদীর কাছে ভীষণ ঈর্ষার। এক প্রকট আঞ্চলিক বাস্তুতন্ত্র কেলেঘাই নদীকে আলাদা করেছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য নদী বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে। বিশেষত কেলেঘাই নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খল মাত্রাতিরিক্ত জটিল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। তার প্রধান কারণ কেলেঘাই নদীর অববাহিকায় ব্যাপক সংখ্যায় প্রাকৃতিক জলাশয়ের অবস্থান। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে এই নদীর নিকটবর্তী বহু জলাভূমি এক-এক ধরনের জলজ জীববৈচিত্র্যের উৎস হিসাবে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে, যা নদীর মূল বাস্তুতন্ত্রের পরিপূরক। জলাভূমিগুলির ভিন্ন ধরন ও তার ভিন্ন বাস্তুতান্ত্রিক সমন্বয় এই নদীর জীববৈচিত্র্যকে চিরকাল সমৃদ্ধ করেছে ও টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এমনই পরিণত বাস্তুতন্ত্রের সহায়তায় বেশ কিছু লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় জীব (জলজ প্রাণী) এখনো এই নদীতে টিকে আছে।
প্রাচীনকাল হতে এই নদী, নদীমাতৃক জনজাতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খাদ্যের প্রধান উৎস। জীবন জীবিকায় সরাসরি এক নিবিড় যোগসূত্র গড়ে উঠেছে নদী ও মনুষ্যকূলের। একদা এই নদী ছিল জীবন জীবিকার মূল উৎস (মৃণ্ময় মণ্ডল ২০২১)। কিছু সম্প্রদায় মানুষের পারিবারিক অর্থনীতি সম্পূর্ণ নদীর মাছের উপর নির্ভরশীল ছিল। আজো তা বহমান তবে নির্ভরতা অনেকখানি কমেছে। দারুণ মিষ্টি স্বাদের জন্য কেলেঘাই নদীর মাছ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে কদর বাড়িয়েছে। এই নদীর মাছ পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চলের বাজারে বিক্রি হত এক বিশেষ ছাপে। এক শ্রেণির মৎস্যভোজী মানুষ ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট ছিল এই নদীর মাছে। দিনে দিনে সেই মাছ প্রজাতির পরিমাণ গভীরভাবে নিম্নগামী। হতাশার বিষয় বর্তমানে বেশ কিছু প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী অস্তিত্বের সংকটে। সভ্যতার অবৈজ্ঞানিক আধুনিকতা ও একপ্রকার লালসা এই প্রজাতি সংকটের মূল কারণ। বর্তমানে কেলেঘাই নদীতে সংকটপূর্ণ জলজ জীবগুলি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত। কিছু কিছু প্রজাতি হারিয়ে গেছে এবং কিছু প্রজাতি হারাতে বসছে।
দীর্ঘদিনব্যাপী আঞ্চলিক সমীক্ষা, বয়স্ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ ও কেলেঘাই নদীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষণ করে, এই নদীর লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় জলজ প্রাণীগুলির একটি সারণি লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস হল এই নিবন্ধটি। আশাকরি এই নিবন্ধটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেলেঘাই নদীর মাছ ও জলজ প্রাণীর সম্পর্কে একটি সম্যক ধারনা দিতে সক্ষম হবে।
কেলেঘাই নদীর বড় থেকে মাঝারি ওজনের মাছ
১। বুয়াল
ইংরাজি নাম Helicopter catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Wallago attu
IUCN দ্বারা Vulnerable তালিকাভুক্ত তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলিনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ বড় বড় জলাশয় ও নদীতে এই মাছের বাস। জলের গভীর অংশে নির্জন এলাকায় থাকতে ভালবাসে। সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে জলের অগভীর অংশে ছোট জলজ প্রাণী শিকার করে খায়। নদীর খাদ্যশৃঙ্খলে এর স্থান একেবারে উপরে। জুন-জুলাই মাসে নদীর চরের অগভীর স্বচ্ছ জলে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- নদীতীরবর্তী মানুষের মতে এই মাছ ১২-১৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
২। আইড়
ইংরাজি নাম Long-whiskered catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Sperata aor
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলিনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদী বা জলাশয়ের পরিষ্কার অগভীর অংশে থাকতে ভালবাসে। নদীর তলদেশে শক্ত ও খরখরে অংশে অবতল গর্ত করে জোড়ে (স্ত্রী ও পুরুষ মাছ) থাকে। মে-জুন মাসে ঐ অবতল গর্তে ডিম পাড়ে। এরাও বুয়াল মাছের মতো নদীর ছোট ছোট মাছ শিকার করে খায়।
সাইজ- ১-২.৫ কেজি ওজনের হয়।
৩। পরাল
ইংরাজি নাম Giant river-catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Sperata seenghala
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ পরাল মাছের বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য আইড় মাছের মতো প্রায় একই ধরনের। তবে পরাল মাছ আয়তন ও ওজনে আইড় মাছের তুলনায় অনেক বড় হয়।
সাইজ- ৩-৪ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৪। পাঙ্গাস
ইংরাজি নাম Yellowtail catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Pangasius pangasius
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ পাঙ্গাস মাছ নদী বা জলাশয়ে সর্বত্রই বিচরণ করে। এদের খাদ্য তালিকায় পচা জীব বা উদ্ভিদের অংশ বেশি থাকে। এদেরকে জলের উপর থেকে অক্সিজেন নিতে প্রায়ই দেখা যায়। নদীতে এদের ব্রিডিং সংক্রান্ত তথ্য তেমন বেশি জানা যায়নি।
সাইজ- ৮-১০ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৫। বাচি
ইংরাজি নাম Batchwa Bacha, বিজ্ঞানসম্মত নাম Eutropiichthys vacha
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব গভীরভাবে বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ তথ্য অজানা।
সাইজ- ০.৫-০.৭ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৬। বাইম
ইংরাজি নাম Indian longfin eel, বিজ্ঞানসম্মত নাম Anguilla bengalensis
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এই প্রজাতির মাছ নদীমধ্যস্থিত বিভিন্ন গাছের গুঁড়ির (জলের নীচে) ফাঁক ফোকরে বসবাস করে। জলের তলায় নরম মাটির কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। এদের বিশেষত্ব এরা গভীর পাঁকে অনেক দিন থাকতে পারে। প্রধানত জলজ কেঁচো ও খুব ছোট প্রজাতির মাছ শিকার করে খায়। বর্ষার আগে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ২-৩ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৭। বাঙ্গুস
ইংরাজি নাম Indian mud moray eel, বিজ্ঞানসম্মত নাম Gymnothorax tile
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ বাইম মাছের মতো এদের বাস্তুতাত্রিক বাসস্থান হলেও এরা সচরাচর গভীর জলে থাকতে পছন্দ করে। এদের গায়ের রঙ কিছুটা বাদামী বর্ণের হয়।
সাইজ- ৩-৪.৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৮। চিতল
ইংরাজি নাম Chitala, বিজ্ঞানসম্মত নাম Chitala chitala
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এর অস্তিত্ব একেবারে বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এরা গভীর স্বচ্ছ জলে বসবাস করতে পছন্দ করে। জলাভূমি বা নদীর একটি নির্দিষ্ট যায়গায় এদের থাকতে দেখা যায়। বড় চিতল মাছ প্রায়শই জলের উপরে অক্সিজেন নিতে ভেসে ওঠে। জলের নীচে কাঠের গুঁড়ি বা ভাঙা নৌকায় অবশিষ্টাংশে এরা ডিম পাড়ে। নদীর ছোট ও মাঝারী মাছ এরা শিকার করে খায়। মোরলা মাছ এদের প্রিয় খাদ্য। এদের কানকোর কাছে ধারালো শক্ত অংশ থাকে। যেটা দিয়ে এরা আত্মরক্ষা করে।
সাইজ- ৮-১০ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৯। ভেটকি
ইংরাজি নাম Barramundi, বিজ্ঞানসম্মত নাম Lates calcarifer
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর সর্বত্র বিচরণ করে। গভীর ও অগভীর অংশে খাদ্যের খোঁজে এরা ঘুরে বেড়ায়। এই মাছ প্রধানত নদীর ছোট ও মাঝারী মাপের মাছ শিকার করে খায়। তবে নদীর চিংড়ি মাছ এদের প্রিয় খাদ্য। অভিজ্ঞ জেলে সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের মতে একটি ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের ভেটকি মাছ সারাদিনে তার শরীরের এক পঞ্চমাংশ ওজনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত এরা ছোট মাছের ঝাঁকের পাশাপাশি ঘুরে বেড়ায়। নদীর মধ্যে গাছের ডাল-পালা পড়ে থাকলে ঐ অংশে থাকতে ভালবাসে। কেলেঘাই নদীতে মে-জুন মাসে প্রথম জোয়ারের জলে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ১০-১২ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
কেলেঘাই নদীর মাঝারী থেকে ছোট মাছ
১। নয়না
ইংরাজি নাম Gangetic leaffish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Nandus nandus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছ এক সময় প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল, তবে এখন এই মাছের দেখা অল্প পরিসরে পাওয়া যাচ্ছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ অগভীর ঘোলা জলে থাকতে ভালবাসে। সাধারণত নদীর যেখানে কচুরিপানা, ঝাঁজি, জলজ উদ্ভিদের অবস্থান সেই সব যায়গায় এদের বসবাস। নদীর নানান শ্যাওলা, জলকেঁচো ও খুব ছোট মাছ এদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এরা ধীরগতি সম্পন্ন ও অলস প্রকৃতির। খুব সহজেই এদের ধরা যায়। জুন-জুলাই মাসে নদীর অগভীর অংশে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ০.২৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
২। বাটা
ইংরাজি নাম Bata Labeo, বিজ্ঞানসম্মত নাম Labeo bata
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছ নানান কারণে বড় হতে পারেনা। খুব ছোট অবস্থায় এদের ধরে ফেলা হয়।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ অনান্য রুই মাছের মতো এরাও নদীর সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। এরা দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত নদীর চড়া বা অগভীর অংশের জলজ প্লাংটন খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে।
সাইজ- ০.৭৫ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৩। খুড়সি
ইংরাজি নাম Kuria labeo, বিজ্ঞানসম্মত নাম Labeo gonius
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছ আর দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর অগভীর জলে ঝাঁজি ও ঝোপের মধ্যে থাকতে ভালবাসে। জলজ শ্যাওলা এদের প্রিয় খাদ্য।এই মাছের গায়ের রঙ একটু হলুদ বাদামী বর্ণের।
সাইজ- ০.৫-০.৭ কেজি ওজনের এই মাছ দেখা গেছে।
৪। কালবোস
ইংরাজি নাম Orangefin labeo, বিজ্ঞানসম্মত নাম Labeo calbasu
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছ খুব কম দেখা যায়। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর গভীর অংশে নরম পাঁকের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। জলজ প্লাংটন ও পচা উদ্ভিদের দেহাংশ এদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। খাওয়ারের সন্ধানে এরা নদীঘাটের কাছে ঘুরতে থাকে। গৃহস্থালির রান্নাজাত (ভাত, কুড়া) দ্রব্যাদি এদের প্রিয় খাদ্য।
সাইজ- ২.৫ কেজি ওজনের এই মাছ দেখা গেছ।
৫। ফলুই
ইংরাজি নাম Bronze featherback, বিজ্ঞানসম্মত নাম Notopterus notopterus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদী বা জলাশয়ের পাড় বরাবর অগভীর চরের অংশে থাকতে ভালবাসে। স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ জলে এরা থাকতে পারে। এরা নদী মধ্যস্থিত ডালপালা ও কাঠের গুঁড়ির ভেতর বাসা বাঁধে এবং ঐ বাসার ভিতর সারা বছর ডিম পাড়ে। এরা অক্সিজেন নিতে বারবার জলের উপরে ভেসে ওঠে।
সাইজ- ০.৭৫ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৬। গলদা চিংড়া
ইংরাজি নাম Giant freshwater prawn, বিজ্ঞানসম্মত নাম Macrobrachium rosenbergii
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই জলজ প্রাণীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদী বা জলাশয়ে সর্বত্র এরা ঘুরে বেড়ায়। রাতের দিকে এরা নদীর অগভীর অংশে খাদ্য খোঁজার জন্য উঠে আসে। জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ এরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। কেলেঘাই নদীর নিম্নভাগে জোয়ারের জলে এরা ডিম পাড়ে। জলজ ঝোপঝাড়েও এদের বেশি থাকতে দেখা যায়।
সাইজ- ০.৩-০.৫ কেজি ওজনের চিংড়া দেখা গেছে।
৭। সনা পুঁঠি
ইংরাজি নাম Olive barb, বিজ্ঞানসম্মত নাম Puntius sarana
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছ হারিয়ে গেছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ সাধারণ পুঁঠি মাছের মতো।
সাইজ- ০.২৫ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৮। পাবদা
ইংরাজি নাম Butter catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Ompok bimaculatus
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি প্রায় হারাতে বসেছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর অগভীর ঘোলা জলে থাকতে ভালবাসে। অগভীর জলে নরম মাটির কাছে সর্বদা খাওয়ার খুঁজে বেড়ায়। বর্ষাকালের প্রাক মুহূর্তে নদীর চরে কম জলে ডিম পাড়ে।
সাইজ- ০.২৫ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৯। আইম্লা
ইংরাজি নাম Indo-Pacific tarpon, বিজ্ঞানসম্মত নাম Megalops cyprinoides
IUCN দ্বারা Data deficient কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন। তবে খুব রেয়ার এই মাছের দেখা মেলে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এই মাছের বাস্তুতান্ত্রিক তথ্য তেমন পাওয়া যায়নি। তবে নদীর স্বচ্ছ জলে এদের থাকতে দেখা যেত।
সাইজ- ০.৭৫-১ কেজি ওজনের এই মাছ দেখা গেছে।
১০। ভাতুয়া
ইংরাজি নাম Bar-eyed goby, বিজ্ঞানসম্মত নাম Glossogobius giuris
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি তাদের অস্তিত্ব এখনো বজায় রেখেছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর অগভীর অংশে মাটির কাছাকাছি এরা থাকে। মুলত জল কেঁচো ও নানান প্রকারের মাছের ডিম খেয়ে থাকে। এই মাছ ধীর স্থির প্রকৃতির। সহজেই একে ধরা যায়।
সাইজ- ০.২- ০.২৫ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
কেলেঘাই নদীর জিওল মাছ
১। শাল
ইংরাজি নাম Bullseye snakehead, বিজ্ঞানসম্মত নাম Channa marulius
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি একেবারেই নিশ্চিহ্ন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ কেলেঘাই নদীর সবচেয়ে চালাক ও শক্তিশালী মাছ ছিল শাল মাছ। এই মাছ ধরার জন্য জেলেরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতো। নদীর পাশাপাশি জলাশয় গুলিতে এদের বেশি দেখা যেত। সাধারণত কচুরিপানা যুক্ত যায়গায় এরা থাকতে পছন্দ করতো। শাল মাছ বছরের বেশিরভাগ সময় একাকি থাকতে পছন্দ করতো, কেবলমাত্র ডিম পাড়ার সময় (বর্ষাকালে) স্ত্রী ও পুরুষ কাছাকাছি আসতো। এই মাছ নদীর সমস্ত প্রজাতির মাছকে শিকার ধরে খেত। ২০০৮ সালের বন্যায় ৪.৫ কেজি ওজনের একটি শাল মাছ গোপালপুর গ্রামের পুরানো কেলেঘাইতে (পটাশপুর থানা) ধরা পড়েছিল।
সাইজ- ৮-১০ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
ছবি-https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0
২। শোল
ইংরাজি নাম snakehead murrel, বিজ্ঞানসম্মত নাম Channa striata
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি অস্তিত্ব এখনো বজায় রয়েছে। তবে এই প্রজাতির মাছকে বড় হতে আর দেখা যায়না।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ শোল মাছের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র শাল মাছের মতোই। তবে এরা কম অক্সিজেন যুক্ত জলাশয়েও টিকে থাকতে অভ্যস্ত। কম জলযুক্ত স্যাঁতস্যাঁতে জলাশয়েও এরা বহুদিন বেঁচে থাকে। ভারি বর্ষার সময় এরা লাফিয়ে লাফিয়ে নতুন জলের সন্ধানে (ডিম পাড়ার জন্য) অনেক পথ অতিক্রম করতে পারে। শোল মাছের গায়ে পিচ্ছিল রস ও এদের আকার লম্বা গোলাকার হওয়ায় এদেরকে ধরা ভীষণ কঠিন। কেলেঘাই নদীর আশেপাশে ২ কেজি সাইজের শোল মাছ মাঝে মাঝে দেখা যায়।
সাইজ-২-২.৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৩। শিঙি
ইংরাজি নাম Asian stinging catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Heteropneustes fossilis
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতি অস্তিত্ব এখনো বজায় রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে ব্যাপক ভাবে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ শিঙি মাছ সাধারণত পতিত জলাশয়ে থাকতে ভালবাসে। এরা জলাশয়ের যেকোনো পরিস্থিতিতে থাকতে পারে। এরা শীতকালে শুকনো জলাশয়ের মাটির গর্তে অনেকদিন পর্যন্ত থেকে যায়। কেলেঘাই নদীর আশেপাশের জলাশয় গুলি থেকে বর্ষার পরে নদীতে চলে আসে। মাটির শ্যাওলা, নানান জলজ ছোট কেঁচো, লার্ভা, আবর্জনা ও অন্যান্য জীবের মৃত দেহাংশ এরা খায়। বর্ষাকালে এরা নতুন জলযুক্ত জলাশয়ে ডিম পাড়ে । এই মাছের কাঁটায় ফুটলে আনেক যন্ত্রণা পেতে হয়। এ-এক ধরনের আত্মরক্ষার কৌশল।
সাইজ- ১ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৪। মাগুর
ইংরাজি নাম Walking catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Clarias batrachus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারে তলানিতে। মাগুর মাছ প্রায় নিশ্চিহ্ন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ শিঙি মাছের মতো মাগুর মাছেরও বাসস্থান একই ধরনের। তবে বাস্তুতাত্রিক সহ্য ক্ষমতা শিঙি মাছের তুলনায় কম, তাই এরা আজ বিলীনের পথে। এদের ডিম পাড়ার ধরণ বেশ জটিল। এই জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধা এদের অস্তিত্বকে বিলীনের মুখে নিয়ে গেছে। মাগুর মাছ তার কানকোর দুইপাশের কাঁটার উপর ভর দিয়ে শুকনো মাটির উপর অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। তবে এদের কাঁটা ফুটলে যন্ত্রণা হয়না। অনেক সময় এই মাছের এলবিনো (‘শ্বেত’-সাদা রঙের) হতে দেখা যায়।
সাইজ- ১.৫-২.০ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৫। কই
ইংরাজি নাম Climbing perch, বিজ্ঞানসম্মত নাম Anabas testudineus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো বজায় রয়েছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ কই মাছ খুব-ই কষ্টসহিষ্ণু মাছ। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোন জলাশয়ে বা নদীর অংশে থাকতে পারে। এদের খাদ্য তালিকায় কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে নানান জৈব আবর্জনা ও শস্যদানা স্থান পায়। এরা ছোট অবস্থায় দল বেঁধে থাকে, পরবর্তীকালে এরা একাকী থাকতে পছন্দ করে। আশ্চর্যের বিষয় এরা শুকনো ভূমিভাগে দীর্ঘ সময় ও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে। এদের দুইপাশে ধারালো কাঁটা সমন্বয়ে দুটি অংশ থাকে, তাই এদের ধরতে খুব অসুবিধা হয়। নতুন বৃষ্টির জলে এরা ডিম পাড়ে। এবং ঐ সময় পুরানো বাসস্থান ছেড়ে নতুন জলাশয়ের খোঁজ করতে থাকে।
সাইজ- ০.১ কেজি ওজনের মাছ দেখা গেছে।
৬। পাঁকাল
ইংরাজি নাম Spiny eel কেলেঘাই নদীতে প্রায় তিন প্রজাতির এই মাছ দেখা যেত। বিজ্ঞানসম্মত নাম Macrognathus aculeatus/ Macrognathus aral/ Macrognathus pancalus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারে তলানিতে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ জলাশয় বা নদীর নরম মাটির অংশে থাকে। এই প্রজাতির মাছগুলি পাঁকের গভীরে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। এদের খাদ্যতালিকায় ছোট কেঁচো, কীটপতঙ্গের লার্ভা ও অন্যান্য মাছের ডিম থাকে। ডিম পাড়ার জন্য এরা অগভীর জলাশয়ের স্বচ্ছ জল পছন্দ করে। সাধারণত বর্ষাকালে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ০.১-০.১৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৭। চ্যাঙ
ইংরাজি নাম Ceylon snakehead, বিজ্ঞানসম্মত নাম Channa orientalis
IUCN দ্বারা Vulnerable তালিকাভুক্ত। কেলেঘাই নদীর আশেপাশে জলাশয় গুলিতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারে তলানিতে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ চ্যাঙ মাছ ছোট আকারের হলেও খুব চালাক ও ভীষণ কষ্টসহিষ্ণু প্রকৃতির। এরা নোংরা কম অক্সিজেন যুক্ত জলে থাকতে পছন্দ করে। শুকনো স্যাঁতস্যাঁতে যায়গায় এরা অনেকদিন টিকে থাকতে পারে। শীতকালে জলাশয়ের নানান গর্তে এরা স্থির ভাবে থেকে যায়। প্রথম বর্ষায় গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়ে। কই মাছের মতো এদের খাদ্য তালিকা।
সাইজ- ০.২৫ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
৮। খলসা
ইংরাজি নাম Banded gourami, কেলেঘাই নদীতে দুই প্রজাতির এই মাছ দেখা যায়। বিজ্ঞানসম্মত নাম Trichogaster fasciata/ Trichogaster chuna
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কম।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ জলাশয় বা নদীর ঝোপঝাড় অংশের কাছে স্বচ্ছ জলে এরা দল বেঁধে থাকতে ভালবাসে। কম জলে খুব সহজেই এরা বেঁচে থাকে। এরা প্রতিনিয়ত অক্সিজেন নিতে জলের উপরের অংশে উঠে আসে। সাধারণত উদ্ভিদজ শ্যাওলা ও কীটপতঙ্গের লার্ভা এদের প্রিয় খাওয়ার। সারা বছর এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ৩-৪ সেমি দীর্ঘের দেখা যায়।
৯। ল্যাঠা
ইংরাজি নাম spotted snakehead, বিজ্ঞানসম্মত নাম Channa punctata
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো বিরাজমান।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এই মাছের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র শোল মাছের মতোই। তবে এরা জলাশয় বা নদীর যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। ডিম পাড়ার প্রধান সময় বর্ষাকাল হলেও, তার কিছু আগে ও পরে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ০.৫-০.৭ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
১০। কাঁনা গাগর/ গাং মাগুর
ইংরাজি নাম Black eeltail catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Plotosus canius
IUCN তথ্য হীন। কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারেই নিশ্চিহ্ন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ মাগুর মাছের মতোই এদের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র। তবে এরা কেবল নদীতেই থাকত। বিগত ৩০-৩৫ বছর আগে এদের কেলেঘাই নদীতে খুব রেয়ার দেখা যেত।
সাইজ- ২.৫-৩.০ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
ছবি সংগৃহীত- https://fishesofaustralia.net.au/home/species/3309
কেলেঘাই নদীর ছোট মাছ
১। ট্যাংরা
ইংরাজি নাম Pearl Catfish/ Asian Striped Catfish, কেলেঘাই নদীতে দুই প্রজাতির ট্যাংরা মাছ দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানসম্মত নাম Mystus tengara/ Mystus vittatus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদী বা জলাশয়ের অগভীর ঘোলা জলে থাকতে পচ্ছন্দ করে। জলের তলদেশে খরখরে মাটির কাছে দল বেঁধে থাকে। জলজ কেঁচো, কীটপতঙ্গের দেহাংশ, লার্ভা এদের প্রিয় খাদ্য। বর্ষা কালে ডিম পাড়ে। কানকোর দুইপাশে কাঁটা এদের আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে।
সাইজ- ১০-১২ সেমি দীর্ঘ।
২। বাবলি ট্যাংরা
ইংরাজি নাম Pabda catfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Ompok pabda
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ ট্যাংরা মাছের মতো এদের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র। জলের উপরের অংশে থাকতে ভালবাসে।
সাইজ- ৫-৬ সেমি দীর্ঘ।
৩। নুনা ট্যাংরা
ইংরাজি নাম Long Whiskers বিজ্ঞানসম্মত নাম Catfish Mystus gulio
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব নদীর নিম্ন অংশে দেখা যায়, যেখানে নোনা জলের প্রভাব থাকে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ ট্যাংরা মাছের মতো এদের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র। তবে জোয়ারের নোনা জল মিশ্রিত মিষ্টি জল এদের বেশ পচ্ছন্দের।
সাইজ- ৪-৫ সেমি দীর্ঘ।
৪। জলা
ইংরাজি নাম Finescale razorbelly minnow বিজ্ঞানসম্মত নাম Salmophasia phulo
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর স্বচ্ছ জলে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায় । জলে ভাসমান শ্যাওলা এদের প্রধান খাদ্য। এরা সারা বছর ডিম পাড়ে।
সাইজ- ১০-১২ সেমি দীর্ঘ।
৫। চাঁদা
ইংরাজি নাম Elongate glassy perchlet, বিজ্ঞানসম্মত নাম Chanda nama
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর অগভীর জলে দল বেঁধে থাকতে পচ্ছন্দ করে। এর পাখনা গুলিতে সরু কাঁটা থাকে যা, এদের আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে। এরা সারা বছর ডিম পাড়ে।
সাইজ- ৪-৫ সেমি দীর্ঘ।
৬। লাল চাঁদা
ইংরাজি নাম Highfin Glassy Perchlet/ Indian Glassy Fish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Parambassis lala/ Parambassis ranga
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ চাঁদা মাছের মতো বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র।
সাইজ- ২-২.৫ সেমি দীর্ঘ।
ছবি সংগৃহীত- https://www.pinterest.de/pin/542824561327483713/
৭। রুটকি
ইংরাজি নাম Peppered loach, বিজ্ঞানসম্মত নাম Lepidocephalichthys guntea
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব প্রায় নিশ্চিহ্ন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এই মাছ ঘোলা জলের অগভীর তলদেশে বসবাস করতে পচ্ছন্দ করে। প্লাংটন এদের প্রধান খাদ্য। এরা খুব দুরন্ত প্রকৃতির হয়।
সাইজ- ৩-৪ সেমি দীর্ঘ।
৮। ছোট চিংড়ি
ইংরাজি নাম Freshwater Shrimps কেলেঘাই নদীতে দুইতিন প্রজাতির ছোট চিংড়ি পাওয়া যায়। বিজ্ঞানসম্মত নাম Ghost Shrimp-Palaemonetes Paludosus, Indian Whisker Shrimp-Macrobrachium Lamarrei, Snowball Shrimp- Neocaridina cf. Zhangjiajiensis
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই প্রজাতিগুলি অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর পরিষ্কার স্বচ্ছ অগভীর জলে বসবাস। চিংড়ি সাধারণত দল বেঁধে সব ধরনের খাওয়ার খায়।এরা ঝাঁঝি ও জলজ লতানো উদ্ভিদের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। সারা বছর ডিম পাড়ে।
সাইজ- ৩-৪ সেমি দীর্ঘ।
৯। পুঁঠি
ইংরাজি নাম Pool barb, বিজ্ঞানসম্মত নাম Puntius sophore
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো বিরাজমান।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদী ও জলাশয়ে অগভীর জলে থাকতে পছন্দ করে। এরা সর্বদাই দল বেঁধে খাওয়ারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। এদের প্রধান খাদ্য কীটপতঙ্গের লার্ভা, প্লাংটন ও শস্যদানার অংশ। বর্ষাকালে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ৪-৫ সেমি দীর্ঘ।
১০। কানি পুঁঠি
ইংরাজি নাম Onespot barb বিজ্ঞানসম্মত নাম Puntius terio
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব দিনকেদিন গভীর সংকটের মুখে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ পুঁঠি মাছের মতোই এদের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র।
সাইজ- ২-৩ সেমি দীর্ঘ।
১১। গাঙ্গা
ইংরাজি নাম Freshwater garfish বিজ্ঞানসম্মত নাম Xenentodon cancila
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব দিনকেদিন গভীর সংকটের মুখে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর অগভীর জলের উপরি অংশে ভেসে বেড়ায়। ছোট ছোট মাছ শিকার করে খায়। খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে।
সাইজ- ১৫-২০ সেমি দীর্ঘ।
ছবি – https://www.inaturalist.org/taxa/115040-Xenentodon-cancila/browse_photos
১২। করকটা
ইংরাজি নাম Gangetic Pufferfish, বিজ্ঞানসম্মত নাম Chelonodon patoca
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ তথ্য আজানা। তবে নদীর ছোট মাছেদের সঙ্গে এদের দেখা যেত।
সাইজ- ৩-৪ সেমি দীর্ঘ।
১৩। বাঁশপাতি
ইংরাজি নাম Gangetic ailia, বিজ্ঞানসম্মত নাম Ailia coila
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারেই বিলীন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ তথ্য অজানা।
সাইজ- ৭-৮ সেমি দীর্ঘ।
১৪। নিশা
ইংরাজি নাম Indian potasi, বিজ্ঞানসম্মত নাম Neotropius atherinoides
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারেই বিলীন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ তথ্য অজানা।
সাইজ- ৫-৬ সেমি দীর্ঘ।
১৫। ধবাচনি
ইংরাজি নাম Blue perch, বিজ্ঞানসম্মত নাম Badis badis
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। মাঝে মাঝে ছোট মাছের সঙ্গে দুয়েকটা দেখা যায়।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ খুব ছোট অকৃতির মাছ। তথ্য খুবই নগণ্য।
সাইজ- ১-২.৫ সেমি দীর্ঘ।
১৬। ডুইমরা
ইংরাজি নাম Corsula mullet, বিজ্ঞানসম্মত নাম Rhinomugil corsula
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীনের মুখে।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর জলের উপরের অংশে ভেসে বেড়ায়। এরা দল বেঁধে থাকে। এরা খুব দ্রুত ও দুরন্ত প্রকৃতির।
সাইজ- ০.৫-০.৭ কেজি ওজনের দেখা গেছে।
১৭। তারি
ইংরাজি নাম Granges River Gizzard Shad, বিজ্ঞানসম্মত নাম Gonialosa manmina
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব একেবারেই নেই বললে চলে। তবে অববাহিকার বিভিন্ন আঞ্চলে খুব রেয়ার দেখা যায়।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর স্বচ্ছ পরিষ্কার অংশে এরা ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়। সাধারণত শ্যাওলা ও প্লাংটন এদের প্রধান খাদ্য। বর্ষাকালে এরা ডিম পাড়ে।
সাইজ- ৫-৮ সেমি দীর্ঘ।
১৮। দাড়িয়া
ইংরাজি নাম Indian Flying Barb, বিজ্ঞানসম্মত নাম Esomus danricus
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো বিরাজমান।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ নদীর মাছের বাস্তুতন্ত্রে এদের ভূমিকা অনেক। কীটপতঙ্গের লার্ভা, শ্যাওলা, ইত্যাদি এদের প্রিয় খাদ্য। এরা দল বেঁধে নদীর নিরাপদ স্থানে থাকতে ভালবাসে। কারণ শিকারি মাছের প্রিয় খাদ্যতালিকায় এদের স্থান একেবারে উপরে। সারাবছর স্বচ্ছ জলে এরা ডিম পাড়ে। এই মাছেদের জলের উপর থেকে সহজে দেখা যায়।
সাইজ- ২-৩ সেমি দীর্ঘ।
১৯। গইনতা
ইংরাজি নাম -, বিজ্ঞানসম্মত নাম Devario devario
IUCN দ্বারা Near threatened তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ গইনতা মাছের বাস্তুতান্ত্রিক চরিত্র কিছুটা দাড়িয়া মাছের মতো। তবে এরা নদীর গভীরতার মাঝামাঝি অংশে থাকতে ভালবাসে।
৩-৪ সেমি দীর্ঘ।
২০। মোরলা
ইংরাজি নাম Mola carplet, বিজ্ঞানসম্মত নাম Amblypharyngodon mola
IUCN দ্বারা Least Concern তালিকাভুক্ত হলেও কেলেঘাই নদীতে এই মাছের প্রজাতির অস্তিত্ব এখনো বিরাজমান।
বাস্তুতান্ত্রিক বাসস্থানঃ এই মাছ ঝাঁক বেঁধে থাকে। নদীর বড় শিকারি মাছের প্রধান খাদ্য মোরলা মাছ। এরা সারা বছর ডিম পাড়ে। শ্যাওলা ও উদ্ভিদজ প্লাংটন এদের প্রধান খাদ্য।
সাইজ- ৩-৫ সেমি দীর্ঘ।
কেলেঘাই নদীর অন্যান্য লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় প্রাণী
১। কাঁকড়া
২। চিতি কাঁকড়া
৩। জলা ইঁদুর
৪। কচ্ছপ
৫। বাইলকোড়
৬। গরু কেঁচুয়া
৭। সনা ব্যাঙ
৮। সিঁতুক
৯। উদ বিড়াল
১০। সাপ
১১। গোসাপ
IUCN Red List into nine groups
- Extinct (EX) – beyond reasonable doubt that the species is no longer extant.
- Extinct in the wild (EW) – survives only in captivity, cultivation and/or outside native range, as presumed after exhaustive surveys.
- Critically endangered (CR) – in a particularly and extremely critical state.
- Endangered (EN) – very high risk of extinction in the wild, meets any of criteria A to E for Endangered.
- Vulnerable (VU) – meets one of the 5 red list criteria and thus considered to be at high risk of unnatural (human-caused) extinction without further human intervention.
- Near threatened (NT) – close to being endangered in the near future.
- Least concern (LC) – unlikely to become endangered or extinct in the near future.
- Data deficient (DD)
- Not evaluated (NE)
তথ্যসূত্র
https://keleghai.in/normal-issue-01/
https://keleghai.in/normal-issue-02/
0 Comments