Script:

বর্ষা সংখ্যা – ২০২১

“খেয়াঘাট”

⦿ অনুপ্রবন্ধ…

⦿ কল্পবোধ…

⦿ অনুগল্প…

⦿ অনুপ্রবন্ধ…

।। বেহুল্যার খেয়া ।।

শ্রী দে বা শি স   কু ই লা 

পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

নদীমাতৃক বেহুলা বাংলার বুকে বয়ে চলেছে কত নাম না জানা নদ-নদী। আবার কেউ সামান্য খ্যাত-যেমন ‘কেলেঘাই’। আর এই সকল নদীর তীর জুড়ে রয়েছে কত গল্প-কাহিনী, কত মন্দির, কত খেয়াঘাট। তেমনি এক খেয়াঘাট বেহুল্যার খেয়াঘাট। কলকল ছলছল শব্দে বয়ে যায় আমাদের প্রিয় নদী কেলেঘাই। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, সবং, ও পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, ভগবানপুর, থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই নদী। আর এই প্রবাহমান স্রোতধারায় রয়েছে বেহুল্যার  খেয়াঘাট, তালাডিয়ার খেয়াঘাট,-আমগাছিয়া,-নাগলকাটা-কাঁটাখালি ও চাব্‌কিয়ার  খেয়াঘাট, আরো কত শত জনপদ।

 ‘সুখ যাপনের স্মৃতির ভেলায়  
 বাইছি খেয়া আজও হায়।’

বেহুল্যার খেয়াঘাট আজ এক স্মৃতির শাম্পান। এই খেয়া ঘাটে হয়তো অতীতের কোন এক অরুণ প্রাতের তরুণী বেহুলা তাঁর ছোট নৌকায় খেয়া বাইতো লোক পারাপারের জন্য। তাই এই খেয়াঘাটের নাম ‘বেহুল্যার খেয়া’ঘাট।

এই খেয়াঘাটের পূর্বপ্রান্তে রয়েছে পটাশপুর থানার অন্তর্গত সেলমাবাদ গ্রাম আর উত্তর প্রান্তে রয়েছে সবং থানার অন্তর্গত গ্রাম রাউতরাবাড়ি। স্থানীয় লোকেরা বলেন আগে এই স্থানে কেলেঘাই নদী পারাপারের জন্য নৌকা চলত এখন বাঁশের ব্রিজ তৈরি হয়েছে। এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য কোক্তিপুর কোলন্দা, বাঁঙ্গাঁলদাঁড়ি, বিলকুয়া, নেধুয়া প্রভৃতি গ্রামের লোকের যেমন এই খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন তেমনি গোপালপুর, পাথরঘাটা, টেপরপাড়া প্রভৃতি গ্রামের লোকেরা ও যাতায়াত করেন।   কেলেঘাই নদীর তীরে মকর সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত তুলসীচারার মেলা। নদীর বিস্তৃত চরে এই মেলা বসে আর দূরদূরান্তের মানুষ বেহুল্যার খেয়া পেরিয়েই এই মেলা দেখতে আসেন।   

 ১৯৭০ সাল পর্যন্ত (প্রায়) পালতোলা নৌকায় নদীর মোহনা থেকে বেহুল্যার খেয়া পর্যন্ত ইট বালি ও মানুষজন পরিবহন চলত। আজও ভুটভুটি নৌকায় কমবেশি এই কাজ চলে। কেলেঘাই নদীর সংস্কারের পর এই বেহুল্যার খেয়া পর্যন্ত জোয়ার ভাটা  খেলতো। আজও কখনো কখনো এই খেলা চলে। লোকশ্রুতি রয়েছে স্বয়ং চৈতন্যদেব যখন নবদ্বীপ থেকে শ্রীক্ষেত্রে পদব্রজে যাত্রা করেছিলেন তখন তিনি পরিষদবর্গ নিয়ে এই বেহুল্যার খেয়া পেরিয়ে গিয়েছিলেন। এবং পাথরঘাটার মহাদেব মন্দিরে রাত্রি যাপন করেছিলেন। 

সেই কারণে কেলেঘাই নদীর তীরে অবস্থিত এই বেহুল্যার খেয়াঘাট আজও আমাদের কাছে এক পবিত্রতম তীর্থ স্থান।

⦿ কল্পবোধ…

।। তবু নদী এবং আমরাও ।।

বি ষ্ণু প দ    দা শ

পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

নদী বাঁকে আজ রং তুলি ক্যানভাসে

ব্রীজের উপর হিজল গাছের ছায়া-

ফিসফিস করে কতনা কথার স্রোত

অক্টোপাশে তবু ঘিরে কত মায়া।

 

তুখোড় জীবন ক্লিশে হয়ে গেছে আজ

সদ্য কিশোর কিশোরীর যত খেলা;

স্কুল ছুটি হলে অভিসারে যেত মন

কেলেঘাই যেন মিলনের এক মেলা !

 

হিজলের জলে চুমু খায় এসে চাঁদ

ফনা তুলে নাচে বিবরের সাপ যত,  

প্রেমপারাবত আসেনাতো আজ ফিরে-

কাল মধুমাসে বিরহ যাপন কত।

 

 উথাল-পাথাল নীরব কথকথা

অঞ্জলি ওমে যৌবন সাঁতরায়-  

থমকে দাঁড়ায় ঊর্মিমুখর রাত

টোকা মারে কেন আমাদের দরজায় ?

।। জলজ স্বপ্নের মতো করে দেখি ।।

শু ভ দী প    চ ক্র ব র্তী

রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর

কেলেঘাই নদীর জলে রাখা যায় উৎকর্ণ বিরুদ্ধতা

শুদ্ধ হংসের চোখ তখন জলজ স্বপ্নে আবিল হয়ে আসে

কেউ এই সমারোহে স্বচক্ষে তাকায় না কেবল অন্তর ছাড়া;

বিদগ্ধ মাঝির বুকে শ্রাবণের শেষ বিন্দুর মতো ঊর্মিসম্ভাষণ।

মনুষ্য নদীর কাছাকাছি অজানা ঘ্রাণ ঘোরাফেরা করে

কত মানবীর গায়ে গিয়ে ওঠে নির্লিপ্ত বৃক্ষের বাল্যবন্ধুতা

তবু নিস্তলে নদীর ভাঙন-শব্দ ক্রমশ বিদ্ধ করে কান,

বিদ্ধ করে রাজর্ষি হরিণীর ব্যাঘ্রব্যাকুলতা।

চূড়ান্ত প্রাণদণ্ডী আলোয় তখন মৃত্তিকাহীন বোধিসত্ত্ব তাপ

সংকুচিত পুষ্পমঞ্জরির কাছে প্রগত সভ্যতার জল রাখা আছে।

সেই জল বিষাদের নয়, সেই জল নয় শেষতম বারি

কেলেঘাই নদীর জলে রাখা যায় উৎকর্ণ বিরুদ্ধতা

অতঃপর তোমার শরীরে কোথাও কোনো নদীবন্দর নেই….

।। কথানদী ।।

কৌ স্তু ভ    শ ত প থী

খড়গপুর,পশ্চিম মেদিনীপুর

যদি একবার ডাকে বারবার ফিরে যাই

এঘাটে পারানি কম আটপৌরে কেলেঘাই

অজানা সোঁতার থেকে ছাপোষা খালের জলে

ঘোলাটে স্রোতের নীচে শ্যাওলারা মখমলে

 

দগ্ধ দহন দিনে সব হারিয়ে সে দেউলিয়া

গাভী চরে তার বুকে বাঁশি বাজে রাখালিয়া

বালিতে আলতো ছুঁয়ে পেরিয়েছি যদি

পারানি মাঝিকে দিই নাকি দাবীদার নদী ?

 

যাত্রী চায়নি সে খেয়ালি ডিঙির আচমন

খেয়াঘাটে ভাটিয়ালি, নিভৃতে কিছুটা ক্ষণ

নুড়ির মতই ছড়ানো তার দুপাশের জনপদ

উদয়ে অস্তে আনমনে আঁকি তটিনীর প্রচ্ছদ

।। খেয়াঘাটের অন্তরে ।।

মৃ ণ্ম য়   ম ণ্ড ল  

পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

গ্রীষ্মের প্রবল দাপট, ক্লান্ত শরীর পেতে চায়

বর্ষার দুরন্ত স্রোত,  এপার-ওপার

ভাঙনের চূড়ান্ত আঘাত শেষ করে দেয়

শীতের আলস্য মাখা ভোর।

আমি খেয়াঘাটে এসে বসি

অস্থিরতায় উত্তাল বিকেল ছুঁয়ে শুধু

প্রতিশ্রুতি জলোচ্ছ্বাস

আমাকে আরো বসিয়ে রাখে, খেয়ার পাশে।

খেয়া-ই আমার জীবন-ভোর, সূর্য ওঠা দিন

খেয়া-ই আমার বন্ধু-সখা, ভাবনার যত লীন।

তারপর-

মোহনা প্রাপ্তির মত তোমাকে পাওয়া, খেয়া পারাপারে

তখন খেয়াঘাট জুড়ে মাঝিকে দেখিনি-  

বহুকাল।

।। খেয়াঘাটে ।।

সু ম ন    ম ল্লি ক

শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি

জলে নেমে যায় স্বপ্ন – স্নানে এত আগুন !

আস্তে আস্তে খুলে যায় মুঠো,

বেরিয়ে আসে মেঘাবৃত এক দিনের ছবি৷

ছলাৎছল ছলাৎছল – ঢেউ – তাতে চাঁদের

আলো নেচে ওঠে – স্নানে এত আগুন !

ওই যে বেগমবাহার হাওয়ায় দোলে,

তার পাশে কে যেন বসে গান গায় মধুর,

আস্তে আস্তে মুঠো খুলে যায় আবার,

বেরিয়ে আসে মুগ্ধস্থির করা একটি রাত৷

খেয়াঘাটে এলেই জলে নেমে যায় স্বপ্ন

আর আমি তা দেখে যেন দৃষ্টি ফিরে পাই৷

স্নানে এত আগুন! এত আগুন স্বপ্নের স্নানে ! 

⦿ অনুগল্প…

।। খেয়া ।।

ম নো তো ষ    আ চা র্য   

এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর

অনেক বছর পর দেখা হল চন্দ্রানীর সাথে। ক্লাশরুমের উড়ুক্কু ভাবটা একেবারে উধাও। চন্দ্রানী এখন অখিলেশের নতুন স্কুলের পাশে গ্রামীণ হেলথ সেন্টারের নার্স। টিকা নিতে গিয়ে দু’জনের আবার চোখাচোখি। মাস্ক কোনো বাধা হয়নি পুরোনো মুখমণ্ডল চিনে ফেলতে। অখিলেশের বামবাহুতে টি-শার্টের হাতা সরিয়ে টিকা দিতে দিতে প্রথমেই মুখ খুলেছিল চন্দ্রানী — স্যার, কেমন আছেন? বেশ কেমন রোগা-সোগা লাগছে?

ভালো আছি। কই তেমন রোগা হইনি তো। তুমি কেমন আছো?

উত্তর শোনার আগেই অন্য সিস্টার বলে উঠল দিদি তাড়াতাড়ি করুন। ভোর পাঁচটা থেকে লম্বা লাইন ।  

ইঞ্জেকশনের পর চন্দ্রানীর গুঁজে দেওয়া তুলো ডানহাতের আঙুল দিয়ে চেপে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো অখিলেশ।

হেলথ সেন্টারের একচিলতে উঠোন পেরিয়ে সুবিশাল ডাঙা। তারপরেই থইথই কেলেঘাই। জলে ভেসে চলেছে ফুলসমেত কচুরিপানার চাক।

Share the article

2 Comments

  1. Santanu Adhikary

    Fantastic initiative brother. Very neat and clean.Just keep it up. All the best.

    Reply
  2. Amiya jana

    Valo laglo, old or historical kono data pele r o valo lagto

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Contact:

ড. মৃন্ময় মণ্ডল (Editor)

পটাশপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ৭২১৪৫৪
ইমেল: o.keleghai@gmail.com
দূরভাষ: +91 96417 83534